আল্লাহ আমাদের কতই নিয়ামত দিয়েছেন - শায়েখ আহমদ্দুল্লাহ

 কারুন যদি আমাদের পকেটে থাকা এটিএম কার্ডের কথা জানতেন, তবে তার ধনভাণ্ডারের চাবি বহনকারী চাকরের বহর নিয়ে দম্ভ করতেন না!

পারস্য সম্রাট কিসরা যদি আমাদের বাসার ড্রয়িং রুমের বিলাসী সোফায় বসার সুযোগ পেতেন, তবে আর নিজের সিংহাসনের চেয়ার নিয়ে গর্ব করতেন না!

রোম সম্রাট কায়সার যদি আমাদের এয়ারকন্ডিশন দেখতেন, তবে মাথার উপর উটপাখির পালক দিয়ে কৃতদাসদের করা বাতাসকে আয়েশ ভাবতেও লজ্জা পেতেন!

পাইক-পেয়াদাদের লোভাতুর দৃষ্টি উপক্ষা করে হেরাক্লিয়াস গ্রীষ্মকালে মাটির হাড়ি কাত করে আয়েশী ভঙ্গিতে ঠান্ডা পানি পান করতেন। আজ আমাদের সহজলভ্য ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পানের স্বাভাবিক দৃশ্য দেখলে হয়তো নিজেকে সম্রাটই ভাবতেন না!

শাহী ভঙ্গিমায় ঘোড়ার চড়া হালাকু খানের সামনে দিয়ে যদি আপনি চকচকা করোলা গাড়ি কিংবা ইসুজু বাইক হাঁকিয়ে যেতেন, তবে তিনি নিজের বাহন নিয়ে গর্ব করতে লজ্জাবোধ করতেন হয়তো!

রাজা-মহারাজারাও মাসের পর মাস পায়ে হেঁটে কিংবা ক্লান্ত উট বা ঘোড়ায় চড়ে হজ্জে যেতেন। আর আমরা কয়েক ঘন্টায় বিলাসবহুল বাহনে উড়াল দিয়ে হাজার হাজার মাইল মাড়িয়ে এসে হাজ্জ করি!
রাজা-বাদশারাও যে সুখভোগের সুযোগ পায়নি, বরং স্বপ্নেও কল্পনা করে নি, তা আমরা সহজেই উপভোগ করছি প্রতিনিয়ত!

মহান রব অগণিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন আমাদের।আপনি চোখ দুটো যতো বেশি মেলবেন ততো বেশি মাথাটা নিচু হয়ে আসবে...
এরপরও আমরা অনেকে ভাগ্য নিয়ে বিলাপ করি!

‘হে প্রতিপালক, তুমি আমাকে সামর্থ দাও, যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ..’। (সুরা নামাল আয়াত ১৯)

লেখকঃ Shaikh Ahmadullah


আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ। যত নেয়ামত পেয়েছি সেগুলোর শোকর আদায় করিনা,শুধু যেটুকু পাইনি তার জন্য আক্ষেপ করতে থাকি।আর এত বেশি দুনিয়ার লোভ- লালসা, আকাক্ষা আমাদের পেয়ে বসেছে যে আমাদের চাহিদার কোন শেষ নেই।যেটুকু পেয়েছি ততটুকুতে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দিবেন।

দয়াময় আল্লাহর দয়ার শেষ নেই।বিশ্বাসী অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সবাইকে তিনি কত নিয়ামত যে দিয়ে রেখেছেন,তার কোন হিসেব করা যাবে না।জীবন রক্ষাকারী আলো,বাতাস(অক্সিজেন সমৃদ্ধ),পানি সহ সব নিয়ামতকে তিনি সৃষ্টিকুলের জন্য 'আম'করে দিয়েছেন।অথচ,আমরা তার বিরুদ্ধাচারণ করেই যাচ্ছি।দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ বান্দাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।

বিচারের দিন আল্লাহ শুধু অপরাধের বিষয়েই না, তার দেয়া নিয়ামতের বিষয়েও জিজ্ঞাসা করবেন।অনু পরিমান কাজও বাদ যাবে না।
"এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।"[ সুরা তাকাসুর আয়াত ৮]

“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।“[সুরা বনীঈসরাইল , আয়াত ৩৬]

"অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।"[সুরা জিলযাল আয়াত ৭-৮]

একটা নেয়ামত সম্পর্কে বলি মেডিক্যাল হিসাব অনুযায়ী প্রতি ঘন্টা অক্সিজেনের মূল্য ৩০০ টাকা।সে হিসাবে আমরা ডেইলি (৩০০×২৪=৭২০০) টাকার অক্সিজেন নিয়ে থাকি। আপনার জম্ম অনুসারে বছররে হিসাব করে দেখতে পারেন এই অব্দি কত টাকার অক্সিজেন আপনি নিয়েছেন।এইসব কথা বলার একটাই কারণ আমরা আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত নেয়ামতের মধ্যে আছি তারপর শুকরিয়া আদায় করে "আলহামদুলিল্লাহ" নামক শব্দটি আমাদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয় না।নাফরমানী নামক শব্দটা আমাদের সাথে এত বেশি জড়িত যে কিছু হলেই আমরা একটা কথাই বলে উঠি "আমার সাথে কেন এমনটা হয়"।আমরা যদি একটু কৃতজ্ঞ হতাম তাহলে কতই না উওম হতো কারণ আল্লাহ তায়ালা বলছেন
(যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।সূরা ইব্রাহিম:৭)
কৃতজ্ঞ হওয়ায় চেষ্টা করি ইনশাআল্লাহ জীবন সুন্দর হয়ে যাবে।



ভালো লাগলে ও লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে ফেসবুকে শেয়ার করে রাখুন।যাতে অন্য ভাই/বোনেরাও আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে জানতে পারে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

খলিফাদের তালিকা

এস্তেঞ্জা লজ্জাস্থানের রোগব্যাধির কারণ (সুন্নাহ বনাম আধুনিকতা)